হিন্দুদের জমি দখল করে মৎস খামারের ঘের?
গোপালগঞ্জঃ ‘জমি চাষ করতে না পারলি আমরা গরিব মানুষ খাবো কী? আমরা হিন্দু বলে কেউ আমাদের কষ্টের কথা শোনে না, আমাদের ভারত চলে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।’ এভাবে কথাগুলো বলেন ৪৫ বছর বয়সী জ্যোৎস্না রানী পোদ্দার।
এ সময় অসহায় সংখ্যালঘু হিন্দু নারীদের কান্নায় সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। শুধু জ্যোৎস্না রানী নন, এমন কষ্ট আর আতঙ্কে রয়েছে ওই এলাকার খেটে খাওয়া অর্ধশতাধিক হিন্দু পরিবার।
ওই গ্রামের মনিমোহন সমাজদার বলেন, ‘আমরা আর কতবার এভাবে জমি রক্ষার জন্য সংগ্রাম করবো? এখন আমরা দিদারের লাঠিয়াল বাহিনীর টার্গেটে পড়েছি। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’ দুই বছর ধরে একের পর এক হিন্দুদের জমি দখলের চেষ্টা, জমি আট্কে বাঁধ দিয়ে মৎস্য ঘের তৈরির পাঁয়তারা, জমি চাষাবাদ করতে বাধা, মারধর, লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে বাড়িতে গিয়ে দেশত্যাগের হুমকিতে আতঙ্কে রয়েছেন শতাধিক হিন্দু কৃষক ও জমির মালিক।
জানা যায়, উপজেলার পারুলিয়া গ্রামের প্রভাবশালী দিদার হোসেন হিন্দু কৃষকদের জমি আট্কে বাঁধ দিয়ে মৎস্যঘের করার পাঁয়তারা করছেন। গত ১৯ এপ্রিল উপজেলার পারুলিয়া গ্রামের প্রভাবশালী দিদার হোসেন তার লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে শতাধিক হিন্দু কৃষকের জমি আট্কে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে মৎস্যঘের কাটার চেষ্টা করেন।
এ সময় মাহমুদপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ রানা, ইউপি সদস্য কামরুল ইসলাম, শম্ভুনাথ বিশ্বাসের নেতৃত্বে এলাকার ক্ষুব্ধ লোকজনের বাধার মুখে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয় তারা। পরে কাশিয়ানী থানার পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি মাটিকাটা এক্সক্যাভেটর (ভেকু) মেশিন জব্দ করে। এ ঘটনার পর ওই এলাকায় হিন্দু কৃষকদের মাঝে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
পারুলিয়া গ্রামের প্রভাবশালী দিদার হোসেন মাহমুদপুর বিলে সামান্য কিছু জমি কিনে বিলজুড়ে ‘মাদবর অ্যাগ্রো ফিশারিজ’ নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে স্থানীয় হিন্দুদের জমি দখলের চেষ্টা করেন এবং হিন্দুদের জমি চাষাবাদ করতে বাধা প্রদান করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘু জমির মালিকরা বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন অব্যাহত রাখে।
তৎকালীন গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক খলিলুর রহমান তার সম্মেলন কক্ষে তৎকালীন কাশিয়ানীর ইউএনও, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দিদার হোসেন সাধারণ মানুষের জমি ভেতরে রেখে পুকুর বা ঘের কাটতে পারবে না, চাষযোগ্য জমি নষ্ট করতে কোনো কিছু করতে পারবে না, হিন্দুদের ভয়ভীতি এবং পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করতে হুমকি-ধমকি দিতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়।
কিন্তু জেলা প্রশাসক খলিলুর রহমান বদলি হওয়ার পর দিদার হোসেন আবারও ওই গ্রামের শতাধিক হিন্দুদের জমি আট্কে ঘের করার চেষ্টা করেন। পরে আবারও কয়েক দফা গ্রামবাসী ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে বৈঠক হলেও থেমে নেই দিদারের অবৈধ কর্মকাণ্ড। প্রতিকার পেতে শতাধিক হিন্দু কৃষক দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তবুও প্রতিকার মিলছে না। এ ব্যাপারে দিদার হোসেন সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এলাকার কিছু স্বার্থান্বেষী মহল আমার বিরুদ্ধে অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’
বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মোকলেছুর রহমান সরকার বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হিন্দু নববার্তা ম্যাগাজিঙ নিউজ ২৩.০৪.২০১৭.
ভালো লাগলে শেয়ার করুন।
আপনার মন্তব্য লিখুন —
LikeLike